কম্পিউটারে কোনো কাজ করতে হলে সেটি প্রোগ্রামিংয়ের মাধ্যমে সম্পন্ন করতে হয়। সাধারণভাবে কম্পিউটারে দুই ধরনের প্রোগ্রাম বা প্রোগ্রামগুচ্ছ থাকে। এর একটি হলো সিস্টেম সফটওয়্যার এবং অপরটি হলো অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার। সিস্টেম সফটওয়্যার কম্পিউটারের হার্ডওয়্যারসমূহকে যথাযথভাবে ব্যবহারের পরিবেশ নিশ্চিত রাখে। অন্যদিকে অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার কোনো বিশেষ কাজ সম্পন্ন করে। এ সকল সফটওয়্যারের সঙ্গে আমাদের পরিচয় বেশি। যেমন অফিস ব্যবস্থাপনা সফটওয়্যার (মাইক্রোসফট অফিস বা ওপেন অফিস বা লিবরা অফিস), ডেটাবেস সফটওয়্যার (ওরাকল বা মাইএসকুয়েল), ওয়েবসাইট দেখার ব্রাউজার (মজিলা ফায়ারফক্স বা গুগলক্রোম) ইত্যাদি। যখনই কোনো সফটওয়্যার কাজ করে, তখনই এর কিছু অংশ কম্পিউটারের প্রধান মেমোরিতে অবস্থান নেয় এবং বাকি অংশগুলো অপারেটিং সিস্টেমের সহায়তায় অন্য কার্যাবলি সম্পন্ন করে।
আবার এমন প্রোগ্রামিং কোড লেখা সম্ব, যা এ সকল সফটওয়্যারের কাজে বিঘ্ন ঘটাতে পারে, বিভিন্ন হার্ডওয়্যারের সফটওয়্যার ইন্টারফেস বিনষ্ট করতে পারে, এমনকি সম্পূর্ণ কম্পিউটারের কার্যক্ষমতাকেও নষ্ট করে ফেলতে পারে। যেহেতু এ ধরনের প্রোগ্রামিং কোড বা প্রোগ্রামসমূহ কম্পিউটারের জন্য ক্ষতিকর, তাই এ ধরনের সফটওয়্যারকে বলা যেতে পারে ক্ষতিকারক সফটওয়্যার বা মেলিসিয়াস (Malicious) সফটওয়্যার। আর এ ম্যালিসিয়াস সফটওয়্যারকে সংক্ষেপে ম্যালওয়্যার ( Malware) বলা হয়ে থাকে। ম্যালওয়্যার এক ধরনের সফটওয়্যার, যা কিনা অন্য সফটওয়্যারকে কাঙ্ক্ষিত কর্মসম্পাদনে বাধার সৃষ্টি করে। আর এ বাধা অপারেটিং সিস্টেম সফটওয়্যার বা এপ্লিকেশন সফটওয়্যার উভয়ের জন্যই হতে পারে । শুধু যে বাধার সৃষ্টি করে তা নয়, কোনো কোনো ম্যালওয়্যার ব্যবহারকারীর কম্পিউটারে রক্ষিত তথ্য চুরি করে। কোনো কোনো সময় ব্যবহারকারীর অজান্তে তার কম্পিউটার সিস্টেমের প্রবেশাধিকার লাভ করে। ম্যালওয়্যার প্রোগ্রামিং কোড, স্ক্রিপ্ট, সক্রিয় তথ্যাধার কিংবা অন্যান্য সফটওয়্যারের মতো প্রকাশিত হতে পারে। অন্যভাবে বলা যায়, কম্পিউটারে অনুপ্রবেশকারী বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর সফটওয়্যারের সাধারণ নামই হলো ম্যালওয়্যার।
কম্পিউটার ভাইরাস, ওয়ার্ম, ট্রোজান হর্স, রুটকিটস, কিলগার, ডায়ালার, স্পাইওয়্যার, এডওয়্যার প্রভৃতি ম্যালওয়্যারের অন্তর্ভুক্ত। অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গেছে যে, ক্ষতিকর সফটওয়্যারের মধ্যে ট্রোজান হর্স বা ওয়ার্মের সংখ্যা ভাইরাসের চেয়ে বেশি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সাইবার আইনের মাধ্যমে ম্যালওয়্যারের উন্নয়ন ও প্রকাশ নিষিদ্ধ হলেও সারাবিশ্বে ইতোমধ্যে অসংখ্য ম্যালওয়্যার তৈরি হয়েছে, প্রতিনিয়ত হচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের এন্টিভাইরাস, এন্টি-ম্যালওয়্যার কিংবা ফায়ারওয়ালের মাধ্যমে ব্যবহকারীগণ ম্যালওয়্যারের হাত থেকে পরিত্রাণের চেষ্টা করে থাকে। শুরুর দিকে বেশিরভাগ ম্যালওয়ারই পরীক্ষামূলকভাবে বা শখের বশে তৈরি করা হয়। বিশ্বের প্রথম ইন্টারনেট ওয়ার্ম মরিস ওয়ার্মও নেহায়েত শখের বশে তৈরি করা হয়েছে। তবে, অনেক অসৎ প্রোগ্রামার অসৎ উদ্দেশ্যে ম্যালওয়্যার তৈরি করে থাকে।
ম্যালওয়্যার কেমন করে কাজ করে ?
যে সকল কম্পিউটার সিস্টেমে সফটওয়্যার নিরাপত্তাব্যবস্থার ত্রুটি থাকে, সেসব ক্ষেত্রে ম্যালওয়্যার তৈরির সুযোগ সৃষ্টি হয়। কেবল নিরাপত্তা ত্রুটি নয় ডিজাইনে গলদ কিংবা ভুল থাকলেও সফটওয়্যারটিকে অকার্যকর করার জন্য ম্যালওয়্যার তৈরি করা সম্ভব হয়। বর্তমান বিশ্বে প্রচলিত অপারেটিং সিস্টেমের মধ্যে উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের ম্যালওয়্যারের সংখ্যা অন্যান্য অপারেটিং সিস্টেমের তুলনায় বেশি। এর একটি কারণ বিশ্বে উইন্ডোজ ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেশি। উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের ভেতরের খবর কেউ জানে না। কাজে কোনো ভুল বা গলদ কেউ বের করতে পারলে সে সেটিকে ব্যবহার করে ম্যালওয়্যার তৈরি করতে পারে। ইন্টারনেটের বিকাশের আগে ম্যালওয়্যারের সংখ্যা খুবই কম ছিল। যখন থেকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে ম্যালওয়্যারকে ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে, তখন থেকেই ম্যালওয়্যারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ম্যালওয়্যারের প্রকারভেদ
প্রচলিত ও শনাক্তকৃত ম্যালওয়্যারসমূহের মধ্যে নিম্নোক্ত তিন ধরনের ম্যালওয়্যার সবচেয়ে বেশি দেখা যায়-
ক. কম্পিউটার ভাইরাস
খ. কম্পিউটার ওয়ার্ম
গ. ট্রোজান হর্স
কম্পিউটার ভাইরাস ও ওয়ার্মের মধ্যে আচরণগত পার্থক্যের চেয়ে সংক্রমণের পার্থক্যকেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। কম্পিউটার ভাইরাস হলো এমন ধরনের ম্যালওয়্যার, যা কোনো কার্যকরী ফাইলের (Executable File) সঙ্গে যুক্ত হয়। যখন ওই প্রোগ্রামটি (এক্সিকিউটিবল ফাইল) চালানো হয়, তখন ভাইরাসটি অন্যান্য কার্যকরী ফাইলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংক্রমিত হয়। অন্যদিকে কম্পিউটার ওয়ার্ম সেই প্রোগ্রাম, যা কোনো নেটওয়ার্কে ছড়িয়ে পড়ে এবং অন্যান্য কম্পিউটারকেও সংক্রমিত করে। অর্থাৎ কম্পিউটার ভাইরাস ব্যবহারকারীর হস্তক্ষেপ ছাড়া (অজান্তে হলেও) ছড়িয়ে পড়তে পারে না। যেমন, কোন পেনড্রাইভে কম্পিউটার ভাইরাসে আক্রান্ত কোন ফাইল থাকলেই তা ছড়িয়ে পড়তে পারে না। যদি কোন কম্পিউটারে সেই পেনড্রাইভ যুক্ত করে ব্যবহার করা হয় তাহলেই কেবল পেনড্রাইভের ভাইরাসটি সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে। অন্যদিকে, ওয়ার্ম নিজে থেকেই নেটওয়ার্ক থেকে নেটওয়ার্কে ছড়িয়ে পড়ে এবং নেটওয়ার্কের কম্পিউটারকে আক্রান্ত করে।
ক্ষতিকর সফটওয়্যারের উদ্দেশ্য তখনই সফল হয়, যখন কিনা সেটিকে ক্ষতিকারক সফটওয়্যার হিসেবে চিহ্নিত করা যায় না। এজন্য অনেক ক্ষতিকারক সফটওয়্যার ভালো সফটওয়্যারের ছদ্মাবরণে নিজেকে আড়াল করে রাখে। ব্যবহারকারী সরল বিশ্বাসে সেটিকে ব্যবহার করে। এটি হলো ট্রোজান হর্স বা ট্রোজানের কার্যপদ্ধতি। যখনই ছদ্মবেশী সফটওয়্যারটি চালু হয় তখনই ট্রোজানটি কার্যকর হয়ে ব্যবহারকারীর ফাইল ধ্বংস করে বা নতুন নতুন ট্রোজান আমদানি করে।
দলগত কাজ : ক্ষতিকর সফটওয়ার কেন তৈরি করা উচিৎ নয়? দলে আলোচনা করে বর্ণনা কর।
নতুন শিখলাম : প্রোগ্রামিং কোড, ম্যালওয়্যার, ওয়ার্ম, ট্রোজান হর্স, রুটকিটস, কীলগার, ডায়ালার, স্পাইওয়্যার, এডওয়্যার, , মরিস ওয়ার্ম, Executable File |
আরও দেখুন...